স্টাফ রিপোর্টারঃ আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জটিল ও ব্যয়বহুল রোগ। আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসা ব্যয় মাসে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা একটি সাধারণ পরিবারের পক্ষে বহন করা কঠিন। দেশের প্রায় ১০-১১ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক এবং তাদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ যদি রোগে রূপান্তরিত হয়, তাহলে দেশের ওপর দুই হাজার কোটি থেকে দশ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তি চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝা পড়বে।
৭ মে (বুধবার) বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে সামাজিক সচেতনতা ও বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, “বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক যদি না জেনে আরেক বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। অথচ একজন বাহক স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। তাই এ বিষয়ে আগেভাগে জানা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করলেই বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতা, কাজি, শিক্ষক ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে সামাজিক জনমত গড়ে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ প্রয়োজন।
এ সময় তিনি নিজে রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং অন্যদেরও নিজেদের থ্যালাসেমিয়া অবস্থা জানার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. মো. সেলিমুজ্জামান, জেনফার বাংলাদেশের জেনারেল ম্যানেজার ডা. আরেফিন এবং প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কোঅর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা. মো. মনির হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক।
আলোচনা সভার আগে আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে এবং ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল: ‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি।