নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে চার দিনের এক কূটনৈতিক সফরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিগত সরকারের আমলে বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান ও তা পুনরুদ্ধারে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা চাওয়া।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর বরাতে জানা যায়, অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, বর্তমানে ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের কোনো পরিকল্পনা নেই। অধ্যাপক ইউনূস এ প্রসঙ্গে বলেন, “তার (স্টারমার) সঙ্গে আমার সরাসরি কোনো কথা হয়নি। তবে আমি বিশ্বাস করি, তিনি বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানাবেন।” তিনি আরও বলেন, “বিগত শাসনামলে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে, তার একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যে রয়েছে বলে বিশ্বাস করি। এসব টাকা জনগণের—চুরির টাকা। এই অর্থ উদ্ধার করা বাংলাদেশের জনগণের অধিকার এবং এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব রয়েছে।”
তিনি সফরে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা, বিমান সংস্থা, সংসদীয় গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ায় কূটনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে একাধিক বক্তৃতা ও বৈঠকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের উচিত বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়ানো, কারণ এই অর্থ জনগণের এবং এই চুরি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।” তিনি যুক্তরাজ্যের প্রতি ‘নৈতিক দায়বদ্ধতা’ উল্লেখ করে বলেন, “আমার লক্ষ্য হল, যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে আরও দৃঢ় এবং কার্যকর সহযোগিতা আদায় করা।”
অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর কেবল একটি কূটনৈতিক সফর নয়, বরং একটি নৈতিক বার্তা ও আন্তর্জাতিক আইনি সহায়তার আহ্বান। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি, তবু তার এই উদ্যোগ বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আন্তর্জাতিক মহলে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
বর্তমানে, বিশ্বের আর্থিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম লন্ডনের ভূমিকা এই অর্থ উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য অনুসারে, এখন যুক্তরাজ্যের উচিত তার ভূমিকাকে আরও জোরদার করা—আইন, তথ্য এবং কূটনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে।