প্রিন্ট এর তারিখঃ Aug 18, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Jul 18, 2025 ইং
সংবিধান সংস্কারে প্রধান উপদেষ্টার জোরাল বার্তা

আবদুল্লাহ আল মামুনঃ
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ জুলাই রাতে তার বাসভবন ‘যমুনা’য় অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বলেছেন, “সংস্কারের সনদ হলেই দ্রুত নির্বাচন করতে হবে। মৌলিক সংস্কার এড়ানোর সুযোগ নেই।” তিনি স্পষ্ট করেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সংবিধানে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা আনতে প্রতিনিধিত্বমূলক ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি অবলম্বন করতেই হবে।
উচ্চকক্ষ গঠনে পিআর (PR) পদ্ধতির গুরুত্ব
ড. ইউনূসের মতে, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ (Upper House) গঠনে Proportional Representation (PR) বা ‘ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন’ পদ্ধতি প্রবর্তন অপরিহার্য। তিনি বলেন, “উচ্চকক্ষে যদি জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব না থাকে, তাহলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে।” ভবিষ্যতে কোনো সরকার যেন একক ইচ্ছায় সংবিধান পরিবর্তন করতে না পারে, সেজন্য তিনি এই পদ্ধতিকে ‘মৌলিক সংস্কারের অংশ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
জুলাই সনদ: সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ
প্রধান উপদেষ্টা কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন, জুলাই মাসের মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ ‘সংস্কার সনদ’ (Reform Charter) প্রস্তুত করতে হবে। এই সনদে উল্লেখ থাকবে—
কোন কোন কাঠামোগত ও সাংবিধানিক সংস্কার আনা হবে,কত দিনের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে,ভবিষ্যৎ নির্বাচন কবে ও কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে।কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সনদটি ৫ আগস্টের মধ্যেই চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে। কারণ, কমিশনের বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ আগস্ট।
রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্ত অবস্থানউচ্চকক্ষ গঠনে PR পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্টভাবে বিভক্ত।বিএনপি PR পদ্ধতির বিরোধিতা করে এবং নিম্নকক্ষের অনুপাত অনুযায়ী আসন বণ্টন চায়।জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণসংহতি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি-সহ ২১টি দল বলেছে, PR ছাড়া উচ্চকক্ষ মানা যাবে না।জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন সংসদ নির্বাচনেও PR পদ্ধতির দাবি জানিয়েছে।
নারী প্রতিনিধিত্বে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাবকমিশনে প্রস্তাব উঠেছে, সংরক্ষিত ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হোক।এনসিপি প্রস্তাবে একমত।বিএনপি চায় বিদ্যমান পদ্ধতি বজায় রাখতে।জামায়াত চায় PR ভিত্তিক নারী আসন নির্ধারণ।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমান পদ্ধতি নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন করে না—এটা একটি প্রতারণামূলক ব্যবস্থা। নারীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের সুযোগ দিলে তবেই তাদের সত্যিকার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।”
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রস্তাবঐকমত্য কমিশন সুপারিশ করেছে, নির্বাচন কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি সুপারিশ কমিটি গঠন করা হোক।এই কমিটিতে থাকবেন—প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলীয় নেতা,প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি,এবং নিরপেক্ষ কয়েকজন সদস্য।বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবে একমত হলেও বিএনপি এখনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
সংলাপের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত সময়সীমাবর্তমানে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন।৮টি বিষয়ে ইতোমধ্যেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।আরও ৭টি বিষয়ে আলোচনা চলছে।প্রধান উপদেষ্টা জানান, সংলাপ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হওয়ায় জনগণ বাস্তব সময়েই দেখতে পাচ্ছে কিভাবে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের নকশা তৈরি হচ্ছে। এ উদ্যোগ দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
সংস্কার ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই নয়ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত ঐকমত্য কমিশন যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র, প্রতিনিধিত্ব এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার রূপরেখা নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘জুলাই সনদ’ হবে সেই নীতিগত ও বাস্তবিক রূপরেখা, যা অনুসরণ করে ভবিষ্যৎ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক কাঠামো নির্ধারিত হবে। পিআর পদ্ধতি, সরাসরি নারী ভোট, এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া—এই তিনটি স্তম্ভই হতে পারে একটি শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Daily Eye / দৈনিক চোখ
www.dailyeye.site/details/591/সংবিধান-সংস্কারে-প্রধান-উপদেষ্টার-জোরাল-বার্তা
www.dailyeye.site