রুহুল-আমিনঃ জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর পর এবার পুরো দলকেও বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ বৈঠকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, সংশোধিত আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন ও সমর্থক গোষ্ঠীকেও বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিতে পারবে।

এর আগে গত ২৩ মার্চ চিফ প্রসিকিউটর জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনতে হলে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে সেই সময় পর্যন্ত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি আন্দোলনকারীদের টানা দাবি, গণজমায়েত ও শাহবাগ অবরোধের ফলে সরকার আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রথমে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাতে যমুনা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে সেখানে যোগ দেয় জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামসহ আরও কয়েকটি সংগঠন। শুক্রবার জুমার পর মিন্টো রোডে সমাবেশ এবং পরবর্তীতে শাহবাগ অবরোধের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি আরও জোরদার হয়।

আন্দোলনের চাপে শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:

• আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন;
• বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব কার্যক্রম—অনলাইন ও অফলাইন—সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে নিষিদ্ধ ঘোষণা;
• জুলাই ঘোষণাপত্র’ আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ।

আসিফ নজরুল জানান, দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট বাদী-সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে প্রয়োজনীয় সরকারি পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলীয়ভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।