বঙ্গাব্দ Christ

নারীর হাত ধরে ই-কমার্সে অগ্রযাত্রা: জান্নাতুল হকের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্য

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : May 12, 2025 ইং
জান্নাতুল হক ছবির ক্যাপশন: জান্নাতুল হক
ad728

ইনভেস্টিগেটিভ করেসপন্ডেন্টঃ জান্নাতুল হক একজন প্রতিশ্রুতিশীল নারী উদ্যোক্তা, যিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ২০১৩ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়। ‘আমান্দ ফ্যাশন’ নামের একটি পেজ দিয়ে এফ-কমার্স কার্যক্রম শুরু করে তিনি নিজের উদ্যোক্তা জীবন গড়ে তোলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরও বড় পরিসরে কাজ করতে আগ্রহী হন এবং গড়ে তোলেন একটি পূর্ণাঙ্গ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান—‘শৈলীর ছোঁয়া’। বর্তমানে তিনি খাদ্য ব্যবসায়ও যুক্ত হয়েছেন এবং ‘এজিউর কুইজিন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর ব্যবসায়িক অনুপ্রেরণা আসে স্বামী আশরাফ উদ্দিনের কাছ থেকে, যিনি একজন প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী। পারিবারিক সহযোগিতা ও স্বামীর উৎসাহে জান্নাতুল ধীরে ধীরে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

জান্নাতুল হকের শৈশব ও শিক্ষাজীবন কেটেছে সিরাজগঞ্জে। তিনি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে ‘চাইল্ড অ্যান্ড সাইকোলজি’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সরকারি কর্মকর্তা পিতা ও গৃহিণী মাতার আদর্শ ও প্রেরণায় বেড়ে ওঠা জান্নাতুল পরিবারে তিন ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ। বর্তমানে তিনি ঢাকার ধানমন্ডিতে বসবাস করছেন।

শিশুকাল থেকেই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে কাজ করার স্বপ্ন লালন করে এসেছেন তিনি। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ও আবেগ। সমাজে নারী উদ্যোক্তারা যেসব কাঠামোগত এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। সংসার সামলে নারীরা যখন ব্যবসায় নামেন, তখন তাদের সামনে নানা প্রতিবন্ধকতা এসে দাঁড়ায়, অনেকেই মাঝপথে হার মানেন। এই চিত্র জান্নাতুলকে তাড়িত করে, উদ্বুদ্ধ করে তাদের পাশে দাঁড়াতে।

এই দায়বদ্ধতা থেকেই ২০২২ সাল থেকে তিনি ১০০–এর বেশি নারী উদ্যোক্তাকে আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। কোভিড-১৯ ও তার পরবর্তী সময়ে এই সহায়তা তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ও এগিয়ে নিতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তাঁর উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তারা ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং অনেকেই এখন স্বাবলম্বীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, তিনি তাঁদের মানসিক সহায়তা, বিপণন পরামর্শ, নেটওয়ার্কিং সুযোগ এবং পরবর্তী ধাপের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, অনেক নারী উদ্যোক্তা আন্তর্জাতিক মেলাতেও অংশগ্রহণ করছেন এবং পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক বাজারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় জান্নাতুল হক একটি সমন্বিত কো-ওয়ার্কিং স্পেস তৈরির স্বপ্ন দেখেন, যেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা একত্রে কাজ করতে পারবেন। এতে থাকবে ছোট ছোট ওয়্যারহাউস, পণ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য প্রযুক্তিনির্ভর প্ল্যাটফর্ম, যা উদ্যোক্তাদের পুরো সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম এক জায়গা থেকে পরিচালনার সুযোগ করে দেবে। তিনি মনে করেন, এখান থেকেই ছোট উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা বড় করতে পারবেন, ভবিষ্যতে গড়ে তুলবেন নিজস্ব অফিস ও বড় পরিসরের ওয়্যারহাউস।

ই-কমার্স খাতের উন্নয়নেও জান্নাতুল হক একটি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন, উদ্যোক্তাদের জন্য নিরাপদ ও নীতিগত সহায়তাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য তিনি গ্রাহকের আস্থা, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, আধুনিক লজিস্টিক ও পেমেন্ট ব্যবস্থা, স্টার্টআপ ফান্ড এবং সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে ই-কমার্সবান্ধব নীতিমালা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন।

নারীর ক্ষমতায়নকে কেবল একটি সামাজিক দায় হিসেবে নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে দেখেন জান্নাতুল হক। তাঁর লক্ষ্য শুধু নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা নয়, বরং ই-কমার্স খাতকে দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা একটি শক্তিশালী খাতে পরিণত করা। তিনি বিশ্বাস করেন, এই খাত কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বরং সামাজিক রূপান্তরের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : নিউজ ডেস্ক

নিউজ লিঙ্ক কপি করুনঃ
www.dailyeye.site/details/550/নারীর-হাত-ধরে-ই-কমার্সে-অগ্রযাত্রা:-জান্নাতুল-হকের-স্বপ্ন,-সংগ্রাম-ও-সাফল্য/

কমেন্ট বক্স