স্পেশাল করেসপন্ডেন্টঃ
মানবিকতা, সাহসিকতা ও দায়িত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী। রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তিনি।
তার আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বুধবার (২৩ জুলাই) নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী গ্রামে তার সমাধিতে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিমান বাহিনীর প্রতিনিধি দল মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ঘটনার বিবরণ
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জুনিয়র সেকশনের ক্লাসরুমে একটি প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই ভবনে বিস্ফোরণ ও আগুন ধরে যায়।
এ সময় শিক্ষিকা মাহরীন নিজের জীবন বাজি রেখে বেশ কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীকে পাশের ভবনে নিরাপদে সরিয়ে নেন। কিন্তু শিশুদের রক্ষা করতে গিয়েই তিনি আগুনে আটকে পড়েন। শরীরের অধিকাংশ অংশ দগ্ধ হয় তার। গুরুতর অবস্থায় তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়, কিন্তু রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
দাফন ও পারিবারিক শোক
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মাহরীন চৌধুরীকে তার পৈতৃক নিবাস নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়ী গ্রামে দাফন করা হয়।
তার স্বামী মনসুর হেলাল, একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী, আবেগভরে বলেন—
"আইসিইউতে শুয়ে শুয়ে ও আমার হাত বুকের কাছে চেপে ধরেছিল। বলেছিল, আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না।"
মাহরীনের বড় ছেলে আয়ান রহীদ মিয়াদ চৌধুরী ‘ও’ লেভেল শেষ করেছেন এবং ছোট ছেলে আদিল রহীদ মাহিব চৌধুরী নবম শ্রেণিতে পড়ে। সন্তানরা বলেন—
"মা যাদের বাঁচিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তারাও আমাদের ছোট ভাইবোন।"
পারিবারিক ও সামাজিক পরিচয়
শিক্ষিকা মাহরীন শুধু সাহসীই ছিলেন না, সামাজিকভাবেও পরিচিত মুখ। তিনি স্থানীয় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ছিলেন। পারিবারিকভাবে তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মীয়। তার বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী জিয়াউর রহমানের খালাতো ভাই। দাদি রওশানারা চৌধুরী ছিলেন জিয়ার খালা।
মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগ আজ দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার সাহসিকতার প্রশংসায় ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। প্রশাসন ও শিক্ষা মহল বলছে—
"নিজের জীবন দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাণ রক্ষা করা নিঃসন্দেহে এক বিরল দৃষ্টান্ত। মাহরীন চৌধুরীর নাম মানবিকতা, সাহস ও শিক্ষার ইতিহাসে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় থাকবে।"