স্টাফ রিপোর্টারঃ ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার নয় মাস পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে গত জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যায় দলটির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে চলমান তীব্র গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে। সংশোধিত আইনে ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক দল, এর অঙ্গসংগঠন ও সমর্থকদের বিচার ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী ও বাদীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সকল কার্যক্রম — অফলাইন ও অনলাইন — নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সরকার জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা এবং পরিপত্র আগামী কর্মদিবসে জারি করা হবে। একইসঙ্গে, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখে পড়ে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সেই অভ্যুত্থানকালে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হন এবং কয়েক হাজার আহত হন।
ছাত্র-জনতা দাবি করে আসছিল যে, গণহত্যা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় অভ্যুত্থানকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারদের বিরুদ্ধে।
এছাড়া, সাইবার স্পেসে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি দুইবারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার অভিযুক্ত আবদুল হামিদের চুপিসারে দেশত্যাগের ঘটনায় ক্ষোভ আরও চরমে পৌঁছায়।
৮ মে রাতে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে যমুনা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এতে এনসিপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, জুলাই ঐক্য, আপ বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন অংশ নেয়। ৯ মে জুমার নামাজের পর বড় সমাবেশ এবং শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
সেই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়, যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।