বঙ্গাব্দ Christ

ঢাবির সাবেক দুই উপাচার্যসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : May 12, 2025 ইং
উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাত বছর পর মামলা হয়েছে ছবির ক্যাপশন: উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাত বছর পর মামলা হয়েছে
ad728

স্টাফ রিপোর্টারঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাত বছর পর মামলা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘটিত ওই ঘটনায় এবার মামলার আসামি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্যসহ ১৩ জনকে। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও প্রায় ৫০০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এই মামলাটি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের তৎকালীন মুখপাত্র রাশেদ খান। রাজধানীর শাহবাগ থানায় তিনি মামলাটি দায়ের করেন। রোববার (৪ মে) বিকেলে মামলাটি গ্রহণের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর।

মামলার এজাহারে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে। আরও যাদের নাম এসেছে তারা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, সাবেক উপাচার্য এবং বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, ঢাকা কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান এবং ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ।

এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যুক্ত হয়। ঠিক পরদিন (৯ এপ্রিল) রাত ১টার দিকে ‘ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ’ লেখা টিশার্ট পরিহিত একদল যুবক ঢাবির উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা বাসভবনের প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এই ঘটনার পর ১০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এস এম কামরুল আহসান শাহবাগ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে রাশেদ খানের অভিযোগ, সেই অভিযোগের সঠিক তদন্ত হয়নি এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হয়নি। বরং, ওই সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়।

রাশেদ খান জানান, ওই সময় শেখ হাসিনাকে কটূক্তির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এরপর উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর মামলায়ও তাকে আসামি করা হয়। দুটি মামলায় আদালত তাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে পাঠায়। রিমান্ডে থাকাকালীন তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।

তার দাবি, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকায় ওই সময় সুষ্ঠুভাবে মামলা করা সম্ভব হয়নি। বারবার চেষ্টা করেও তার মামলা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা তখনও মামলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মামলা নেয়নি পুলিশ। এখন গণতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা আবার এই মামলার মাধ্যমে বিচার চাইছি।”

মামলার বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, “এই হামলা পরিকল্পিত ছিল এবং এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই না, তারাও এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়। অথচ প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে নিরীহ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছিলাম বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের বিজয় ঘোষণা করা হয়নি। সেটিও একটি ষড়যন্ত্র ছিল। একই সঙ্গে এই হামলার তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি কোনো ফলাফল প্রকাশ করেনি। সেদিন কারা আগুন লাগিয়েছে, সেটি বের করতেই এই মামলা দায়ের করেছি।”

তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এই বিষয়ে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসন নতুন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এই মামলাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্র রাজনীতি এবং গণআন্দোলনের অতীত ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর এমন একটি ঘটনা নিয়ে মামলা হওয়ায় রাজনৈতিক ও শিক্ষাঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : নিউজ ডেস্ক

নিউজ লিঙ্ক কপি করুনঃ
www.dailyeye.site/details/544/ঢাবির-সাবেক-দুই-উপাচার্যসহ-১৩-জনের-বিরুদ্ধে-মামলা/

কমেন্ট বক্স