স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের ২০১৩ সালের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আংশিক আপিল আগামী মঙ্গলবার (১৩ মে) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর এই মামলার শুনানি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন প্রদান করে। তবে জামায়াতের নিবন্ধনকে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন পক্ষ ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ আরও কয়েকজনকে বিবাদী করা হয়, এবং তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান।
২০০৯ সালে এই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করে, এবং দলের গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়। তবে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে, কারণ এটি আইনি কর্তৃত্বের বাইরে ছিল বলে আদালত মত প্রকাশ করে।
যদিও জামায়াতে ইসলামী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল, ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি আদালতে জামায়াতের আবেদন খারিজ করেন। এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় ২ নভেম্বর প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী তাদের পক্ষে আইনজীবী আবেদনের মাধ্যমে পুনরায় আপিল করার সুযোগ চায়।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে আপিল বিভাগ। তবে, জামায়াতের আইনজীবী দাবি করেছিলেন যে, তাদের সিনিয়র আইনজীবী অসুস্থ ছিলেন এবং এ কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। আইনি সুযোগের প্রশ্নে, জামায়াত আইনজীবীরা আদালত থেকে পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করতে সক্ষম হয়, এবং ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এর পর, ১৩ মে আবার শুনানি হবে।
এই আইনি লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী একাধিক রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এবং এই নিষিদ্ধের আদেশ ২০২4 সালের ১ আগস্ট সরকারের তরফ থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয়। জামায়াত এরপর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে এবং তাদের নিষিদ্ধ হওয়ার আদেশ বাতিলের চেষ্টা চালায়।
এরপর, গত ২৮ আগস্ট সরকার পূর্বের নিষিদ্ধ আদেশ বাতিল করে এবং জামায়াতে ইসলামীকে পুনরায় রাজনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ দেয়। বর্তমানে তাদের নিবন্ধন মামলার পুনঃশুনানি হচ্ছে এবং মামলার ফলাফল তাদের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী অংশগ্রহণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী ১৩ মে, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতে ইসলামী দলের নিবন্ধন নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামী দলের নিবন্ধন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে, যা আগামী দিনে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব এবং নির্বাচনী পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে।
এই মামলার শুনানি রাজনৈতিক এবং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।