বঙ্গাব্দ Christ

আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ: সরকারের প্রজ্ঞাপন এবং এর পটভূমি বিশ্লেষণ

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : May 12, 2025 ইং
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছবির ক্যাপশন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
ad728

স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ সরকার একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সমস্ত অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। প্রজ্ঞাপনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এবং তা অবিলম্বে কার্যকর করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী দমন-পীড়ন, গুম, খুন, ধর্ষণ, এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে।

বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন দমনে সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা গণহত্যা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে এবং দেশের বিভিন্ন ফৌজদারি আদালতে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সোশ্যাল মিডিয়া, লিফলেট, সভা-সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ও উস্কানি প্রদান করে চলেছে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব, সংহতি ও আইনশৃঙ্খলার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে উঠেছে।

সরকার দাবি করেছে যে, দলটি বর্তমানে সন্ত্রাসী সংগঠনের কায়দায় কাজ করছে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে বিচারাধীন মামলার বাদী, সাক্ষী এবং তদন্ত কর্মকর্তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯–এর ধারা ১৮(১)-এর আওতায় নেওয়া হয়েছে। এই আইনি ধারা সরকারকে যেকোনো সংগঠন বা দলের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার ক্ষমতা প্রদান করে, যদি তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সংহতির জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হয়।

প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা হয়েছে—

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের পক্ষে

  • গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা,

  • যেকোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল ও রাজনৈতিক কর্মসূচি,

  • পথসভা বা সম্মেলনের আয়োজন

পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ও বিতর্কিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত হওয়া দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর থাকাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি আরও জোরদার করা হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : নিউজ ডেস্ক

নিউজ লিঙ্ক কপি করুনঃ
www.dailyeye.site/details/553/আওয়ামী-লীগ-ও-এর-অঙ্গসংগঠনের-সব-কার্যক্রম-নিষিদ্ধ:-সরকারের-প্রজ্ঞাপন-এবং-এর-পটভূমি-বিশ্লেষণ/

কমেন্ট বক্স