নিউজ ডেস্কঃ নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জবাবদিহির সংস্কৃতি মেনে চলেন না। তিনি বলেন, সামনাসামনি প্রশ্ন করা হলে ইউনূস অধিকাংশ সময় প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বিদায় করে দেন অথবা একেবারেই কোনো প্রতিক্রিয়া জানান না।
৩ জুন (মঙ্গলবার) ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন মান্না।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
মান্না প্রশ্ন তুলে বলেন, “ডিসেম্বরের আগে একটি মাত্র দল নির্বাচন চায়, এমন মন্তব্য ইউনূসের মতো শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আসা ভুল এবং বিভ্রান্তিকর।”
তিনি বলেন, “দেশে অন্তত ২৯টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে, তা জেনেও এ রকম বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউনূস এখনও কোনো ব্যাখ্যা দেননি তার এই বক্তব্যের বিষয়ে।
মান্না বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এখন পর্যন্ত চার-পাঁচবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও, সেগুলোর মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র বা নির্বাচনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেননি। তাঁর ভাষায়, "যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে, তখন দেশের নাগরিকরা আশা করে স্পষ্ট ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য। কিন্তু ইউনূস শুধু আশাবাদের কথা বলেন, কিন্তু কার্যত কিছু বলেন না।"
মান্না বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর মতো দলও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়, জুনে নয়। কিন্তু সরকার জুনের মতো প্রতিকূল মৌসুমি সময়ে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে, যার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
তিনি এই বিষয়টিকে একটি অস্বচ্ছ ও অসঙ্গত রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
নির্বাচন ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে মান্না বলেন, “বিদেশি পরামর্শদাতা একদিকে বলেন, হিউম্যান করিডর নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, আর নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তা অস্বীকার করে—এতে দেশের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিবেশী একটি দেশ (ভারত) পতিত স্বৈরাচারকে মদদ দিচ্ছে, যা সীমান্তে সংঘর্ষ ও বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।”
তার আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়কার ভূরাজনৈতিক টেনশনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “রাজনীতি করতে হলে বুঝে করতে হয়, শুধু শক্তি থাকলেই হয় না। ভুল নীতির ওপর দেশ চালানো যায় না।” তিনি সরকারকে দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে আচরণের আহ্বান জানান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন:
-
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ
-
বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ
-
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ
-
এলডিপির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ
-
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফওজুল হাকিম
-
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান
এই আলোচনা সভায় নেতারা সংবিধান, মানবাধিকার এবং অবাধ নির্বাচনের বিষয়গুলোতে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি দাবি করেন।