ইনভেস্টিগেটিভ করেসপন্ডেন্টঃ ড. শিয়ান শ্যুসেনের জীবন কেবল একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর গল্প নয়, বরং এটি আধুনিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যেখানে রাজনীতি, বৈজ্ঞানিক প্রতিভা, অভিবাসননীতি এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য এক সূত্রে গাঁথা। ১৯১১ সালে চীনের হাংজৌ শহরে জন্ম নেওয়া শিয়ান, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য যান এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (Caltech) অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি থিওডর ভন কারমানের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করে অল্প সময়ের মধ্যেই আমেরিকার শীর্ষ রকেট বিজ্ঞানীদের একজন হয়ে ওঠেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গাইডেড মিসাইল, জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি, এবং এমনকি ম্যানহাটান প্রকল্পে অবদান রাখা এই বিজ্ঞানীকে যুদ্ধশেষে নিরাপত্তার অজুহাতে কমিউনিজম-ভীতির (Red Scare) কারণে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ছিল না, তবুও পাঁচ বছর গৃহবন্দী রেখে ১৯৫৫ সালে তাঁকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়—যেখানে চীনা সরকার তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে।
চীনে ফিরে গিয়ে শিয়ান আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন এবং মহাকাশ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। মাত্র এক দশকের মধ্যে তিনি চীনকে এমন প্রযুক্তিগত উচ্চতায় নিয়ে যান, যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক কৌশলগত ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়। তাঁকে “চীনের রকেট প্রযুক্তির জনক” বলা হয় এবং জাতীয় বীর হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
এই ঘটনা আজকের দিনে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক, যখন যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করছে। ড. শিয়ানের জীবন থেকে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে মেধার অবমূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক পক্ষপাত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে বিপরীত দিকে মোড় নিতে বাধ্য করে।
তাঁর জীবন এক অমোঘ বার্তা দেয়—একটি জাতির প্রকৃত শক্তি মেধাকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতায় নিহিত, এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সন্দেহ নয়, দরকার সাহস ও সহিষ্ণুতা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি এক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে—যেখানে একজন মানুষকে ত্যাগ করে তারা একটি প্রযুক্তিগত যুগ হারায়, আর চীন এক পরাশক্তিতে রূপ নেয়।