ইনভেস্টিগেটিভ করেসপন্ডেন্টঃ যুক্তরাজ্যের সদ্যসমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রাজনীতিক টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির হয়ে পাশাপাশি আসন থেকে নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনে লেবার পার্টির তহবিল গঠনে টিউলিপ সিদ্দিকের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় মহলে জানা গেছে, তিনি স্টারমারকে নির্বাচনে আর্থিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে পূর্ণ সহায়তা দিয়েছেন।
বৃটেনে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশি প্রবাসী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া আনুমানিক ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের একটি অংশ লেবার পার্টির নির্বাচনী তহবিলে গিয়েছিল, যার মধ্যস্থতায় ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। যদিও বিষয়টি এখনও সরকারি কোনো তদন্তে প্রমাণিত হয়নি, তবে এই অভিযোগ এখন ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গন ও মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে।
এমন পরিস্থিতিতে টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে তার মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো বিচারিক রায় এখনও আসেনি, তবে লেবার পার্টির অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও রাজনৈতিক চাপের কারণে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটা স্টারমার নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এরই মধ্যে বৃটিশ সরকারকে রাজি করিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের দুর্নীতিবাজ কিছু মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ীর বিদেশে রাখা সম্পদ জব্দে সফল হয়েছেন। এই কূটনৈতিক সাফল্য তাকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের পক্ষে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে খোলামেলা বৈঠকে বসা রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর হয়ে উঠতে পারে। কারণ, একদিকে তার দলের নির্বাচনী তহবিল নিয়ে বিতর্ক, অন্যদিকে টিউলিপ সিদ্দিকের মাধ্যমে সম্ভাব্য অর্থ পাচারের অভিযোগ—এই দুই বিষয় তাকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করছে।
তবে অধ্যাপক ইউনূস আশাবাদী। তিনি বলেন—
"স্টারমার যদি নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করেন, তাহলে তিনি বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করবেন। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনায় তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।"
বাংলাদেশ সরকার যদি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সক্ষম হয়, তাহলে এই অর্থ জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার প্রস্তাব উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে,
এই অর্থ দিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আধুনিক যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ এবং পরমাণু সক্ষমতা গড়ে তোলা যেতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ভারতের আগ্রাসী মনোভাব ও সীমান্তবর্তী অজুহাত তৈরির প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশকে সামরিক সক্ষমতায় স্বনির্ভর করা অপরিহার্য হয়ে উঠছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, “শুধুমাত্র ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বলিষ্ঠ কূটনৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার কারণেই এখন পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশের পক্ষ থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ সম্ভব হয়নি।”