আব্দুল করিম: এক সচ্ছল কৃষক, অনেক গরু-পালক আছে, গ্রামের সম্মানিত ব্যক্তি।
সালাম মিয়া: করিমের প্রতিবেশী, পুরোনো পারিবারিক শত্রুতা রয়েছে করিমের সঙ্গে।
রহিম ও কাশেম: করিমের দুই ছেলে।
জামাল ও নাসির: সালাম মিয়ার ছেলে।
বাশার: এক দক্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
আদালত ও গ্রামবাসী: সমাজের বিচার ও প্রতিক্রিয়ার প্রতীক।
একদিন গভীর রাতে করিম সাহেবের সবচেয়ে দামি ও আদরের গরুটি চুরি হয়ে যায়।
কে চুরি করল, সেটা কেউ জানে না।
কিন্তু করিম সাহেব ও তার পরিবার এক মুহূর্ত চিন্তা করল—
“আমাদের পুরনো শত্রু সালাম মিয়ার পরিবার নিশ্চয়ই এই কাজ করেছে।”
তারা আসল চোর ধরার চেষ্টা না করে প্রতিপক্ষের (সালাম মিয়ার) ওপর দোষ চাপানোর পরিকল্পনা করে।
তারা ভাবে,
“এটাই সুযোগ—শত্রুর বদনাম করতে পারব, হয়তো শাস্তিও দিতে পারব।”
তারা আদালতে অভিযোগ করে কিন্তু কোনো প্রকৃত প্রমাণ দিতে পারে না। আদালত বলে:
“প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষী করা যাবে না।”
এদিকে কিছুদিন পর করিম সাহেবের আরও দুটি গরু চুরি হয়।
তবুও তারা আবারো সালাম মিয়ার পরিবারকে দোষারোপ করে।
এবার তারা মিথ্যা সাক্ষ্য আর ভুয়া প্রমাণ তৈরি করে।
কিছু লোককে ঘুষ দিয়ে সাক্ষ্য দেয়—
“সালাম মিয়ার ছেলেরা বারবার করিম সাহেবের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতো।”
আদালত এবার কিছুটা সন্দেহের বশে সালাম মিয়ার পরিবারকে সাময়িক শাস্তি দেয়।
করিম সাহেব আনন্দে সবাইকে জানায়:
“দেখো, ওরা চোর! ওরা খারাপ পরিবার!”
বড় চমক:
এই ঘটনার কয়েকদিন পর এক গভীর রাতে করিম সাহেবের পুরো ঘরে আবার বড় চুরি হয়—
সব টাকা, অলংকার, গরু সব নিয়ে যায়।
তিনি প্রায় নিঃস্ব হয়ে যান।
এখন আদালত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে এবং একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাশারকে তদন্তে নিয়োগ দেয়।
আসল সত্য উন্মোচন:
বাশার তদন্ত করে জানতে পারে,
চুরি করছিলো একদল পেশাদার চোর, যারা গ্রামের বাইরের সংঘবদ্ধ চক্র।
তারা বুঝেছিল করিম ও সালাম পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে—
তাই তারা সেই সুযোগে বারবার চুরি করছিল।
শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা বাশার চোরদের ধরে ফেলে এবং সত্য সকলের সামনে প্রকাশ করে।
শেষের ফলাফল:
সালাম মিয়ার পরিবার নির্দোষ প্রমাণিত হয়।
গ্রামবাসী স্বস্তি পায় ও শিক্ষা নেয়।
কিন্তু করিম সাহেব খুশি হতে পারেন না, কারণ তার শত্রুকে ছোট করার ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়।
শিক্ষা ও সমাজের বাস্তবতা (কি শিখলাম):
- অন্ধ প্রতিশোধ নিজের ক্ষতি ডেকে আনে
- → আবেগ ও শত্রুতায় সত্যকে আড়াল করলে নিজেরই বড় ক্ষতি হয়।
- সত্য প্রতিষ্ঠায় প্রমাণ দরকার
- → আদালত শুধু আবেগে নয়, প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করে।
- আসল সমস্যা থেকে চোখ সরালে অপরাধীরা লাভবান হয়
- → করিম যদি শুরুতেই আসল চোর ধরার চেষ্টা করত, এমন ক্ষতি হতো না।
- মিথ্যা প্রমাণ সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে
- → মিথ্যা সাক্ষ্য ও প্রমাণ দিয়ে নিরীহকে ফাঁসানো অন্যায় এবং অন্যের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।
- গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও সঠিক তদন্ত অপরিহার্য
- → প্রতিটি অপরাধের সঠিক তদন্ত ও বাস্তব প্রমাণ ছাড়া সত্য বের করা যায় না।
সমাজে এই ঘটনার প্রতিফলন:
আজকের সমাজেও এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেখানে কেউ কারো ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে মিথ্যা দোষ চাপায়, সঠিক তদন্ত হয় না, এবং আসল অপরাধীরা বারবার সুযোগ নেয়। তাই এই গল্প আমাদের শেখায়,
ন্যায়বিচার, সততা ও ধৈর্য ছাড়া সমাজে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।